বরফ ফেসিয়াল বা আইস ফেসিয়ালের উপকারিতা ও নিয়মাবলী
আজকাল রূপচর্চায় বরফ ফেসিয়াল বা আইস ফেসিয়াল খুব বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বরফের ঠান্ডা স্পর্শ ত্বকে এক অনন্য সজীবতা এবং উজ্জ্বলতা আনে, ত্বককে করে তোলে প্রাণবন্ত। অনেকে সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য নিয়মিত আইস ফেসিয়াল করেন। বরফ ফেসিয়াল ত্বকের জন্য কতটা উপকারী এবং কিভাবে এটি করতে হয়, সেটাই আজকের আলোচনা করব তবে অবশ্যই বরফ ফেসিয়াল করার আগে কিছু নিয়ম-কানুন জেনে করবেন না হলে হেতে বিপরীত হতে পারে, তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়া অনুরোধ রইলো।
বরফ ফেসিয়ালের উপকারিতা:
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি:
বরফ ফেসিয়াল ত্বকে তাৎক্ষণিক উজ্জ্বলতা এনে দেয়। বরফের ঠান্ডা স্পর্শ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, ফলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। বিশেষ করে ত্বক যদি নিদ্রাহীনতার প্রভাব অথবা ক্লান্ত বা মলিন দেখায়, আইস ফেসিয়াল তখন ত্বককে দ্রুত সজীব করে তুলতে পারে, তাই উজ্জ্বলতার জন্য বরফ ফেসিয়ালকে অন্যতম কার্যকরী ভূমিকা রাখতে দেখা যায়।
ব্রণ ও ফুসকুড়ি নিয়ন্ত্রণ:
অনেকের ত্বকে ব্রণ ও ফুসকুড়ির সমস্যা দেখা যায়। বরফ ফেসিয়াল ত্বকের লোমকূপ সংকুচিত করে যা তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে ত্বক তেলতেলে হয়ে ওঠে না, ফলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। এটি নিয়মমাফিক ব্যবহার করলে ত্বকে ব্রণের সমস্যা দূরত্ব সমাধান হবে।
পাফিনেস কমানো:
ঘুম থেকে উঠে যদি চোখের চারপাশে ফোলা ভাব দেখা যায়, তাহলে বরফ ফেসিয়াল দ্রুত এই ফোলা ভাব কমিয়ে দেয়। বরফের ঠান্ডা প্রভাব ত্বকের পাফিনেস কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে চোখের চারপাশে। অনেকেই চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে ঠান্ডা চামিচের উল্টোপিক দিয়ে সেক দেওয়াকে খুবই কার্যকারী বলেছেন।
বয়সের ছাপ কমানো:
বরফ ত্বক টানটান করে যা অকাল বার্ধক্যের লক্ষণগুলো, যেমন বলিরেখা ও ফাইন লাইনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত আইস ফেসিয়াল ত্বকের কোষকে রিফ্রেশ করে এবং ত্বককে দীর্ঘ সময়ের জন্য তরুণ রাখে। জানা গেছে জাপানিরা তাদের ত্বক উজ্জ্বল এবং বয়সের চাপ কমাতে রাতের বেলা ঘুমোনোর আগে বরফ ফেসিয়াল করে থাকে।
রোদে পোড়া ত্বকে স্বস্তি:
রোদের তাপ ও ইউভি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে এবং ত্বক পুড়ে যায় এবং ত্বক কালো অথবা লালচে হয়ে যায়। বরফ ফেসিয়াল এই পুড়ে যাওয়া ত্বকে প্রশান্তি দেয় এবং ত্বকের লালচে ভাব কমায়। শসা রস মিশ্রিত বরফ পরিস্কার সুতি কাপড়ের পেঁচিয়ে মাসাজ করলে রোদে পোড়া দাগ দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে, বর্তমানে বড় বড় সেলিব্রিটিদেরও এই বরফ ফেসিয়াল তথা আইস ফেসিয়াল করতে দেখা যায়।
সেলিব্রিটিদের বরফ ফেসিয়ালের দৃশ্য।
বরফ ফেসিয়াল করার নিয়মাবলী:
আইস ফেসিয়াল করার জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি রয়েছে, যা ঘরেই করা যায়:
বরফ ঘন করুন: প্রথমেই বিশুদ্ধ পানি নিয়ে বরফ তৈরি করুন। বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করলে ত্বকে কোন ধরনের অ্যালার্জি বা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে, পানির সাথে শসার রস মিশ্রিত করতে পারেন এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। মিশ্রিত পানি আইস ট্রে এর মধ্যে অথবা আইস ব্যাগ ঢেলে ডিপ ফ্রিজে রাখুন আনুমানিক ১০ থেকে ১২ ঘন্টার মধ্যেই পানিগুলি বরফে পরিণত হবে, এবং সেটি ব্যবহারের উপযোগী হবে।
সরাসরি ত্বকে বরফ লাগাবেন না: সরাসরি বরফ ত্বকে লাগানো উচিত নয়, কারণ এটি ত্বক পুড়িয়ে ফেলতে পারে, এবং ত্বকের কোষগুলির ক্ষতি করে ফেলতে পারে। একটি পাতলা চুটি কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে ব্যবহার করুন অথবা একটি পাত্রের পানিতে কিছু বরফ দিয়ে সেটির মধ্যে মুখ প্রবেশ করাতে পারেন। এটি ত্বকের জন্য সুরক্ষিত এবং আরামদায়ক করে তুলবে।
মৃদু চাপ দিয়ে ব্যবহার করুন: ত্বকের উপর বরফ আলতো করে ম্যাসাজ করুন, বিশেষ করে মুখের এমন অংশগুলোতে যেখানে তেলতেলে ভাব বেশি থাকে। বরফ ২-৩ মিনিট ধরে এক স্থানে ধরে রাখা উচিত নয় বরং পুরো মুখে হালকা চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করুন, অথবা বরফ মিশ্রিত পানির মধ্যে এক মিনিট মুখ ডুবিয়ে মুখ তুলে ফেলুন এবং কিছুক্ষণ পর আবার মুগ ডুবিয়ে নিন এইভাবে পাঁচ থেকে ছয় বার করলেই যথেষ্ট হবে।
মুখ পরিষ্কার করে নিন: আইস ফেসিয়াল করার আগে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে, যেন ত্বক ময়লা ও তেলমুক্ত থাকে। বরফ ফেসিয়াল ব্যবহার করার পরে মুখের তৈলাক্ততা একদমই কমে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে তােই এর জন্য ফেসিয়াল শেষে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন, এতে ত্বক আর্দ্র থাকবে।
রাতে ব্যবহার করা ভালো: বরফ ফেসিয়াল করতে চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে করা উত্তম। এটি সমান্তরালভাবে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে ত্বককে সারারাত ঠান্ডা রাখে এবং সকালে মুখকে সতেজ রাখে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে অথবা অথবা বিকেলে এটি করা যেতে পারে।
বরফ ফেসিয়ালে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার:
সাধারণ পানির পরিবর্তে শসা, গ্রিন টি বা গোলাপজল ব্যবহার করে বরফ তৈরি করা যেতে পারে। এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ত্বকে অতিরিক্ত পুষ্টি যোগ করে এবং ত্বকের যত্নে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
শসার বরফ: শসা প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা এবং হাইড্রেটিং, তাই শসার রস দিয়ে বরফ তৈরি করে ব্যবহার করলে ত্বক আর্দ্র ও মসৃণ থাকে। কিছু শশাকে ব্লেন্ডারে পিষে তার থেকে রস বের করে সেগুলো দ্বারা বরফ তৈরি করা যেতে পারে।
গ্রিন টি বরফ: গ্রিন টি ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বককে বয়সের ছাপ থেকে রক্ষা করে। গ্রিন টি দিয়ে বরফ তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করলে এটি ত্বকের পুষ্টি যোগায় এবং ত্বককে সজীব রাখে।
গোলাপজল বরফ: গোলাপজল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বকে রোমান্টিক সৌন্দর্য এনে দেয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ত্বককে গ্লোয়িং করার জন্য গোলাপ জলের ব্যবহার অনেক পূর্বে থেকেই বিদ্যামান রয়েছে, তাই বরফ তৈরীর ক্ষেত্রে গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন।
সতর্কতা:
বরফ ফেসিয়াল সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযুক্ত হলেও কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত অন্যথায় উপকারের পরিবর্তে অপকারী হতে পারে:
অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না: অতিরিক্ত ঠান্ডা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে তোকে আলতো করে তিন থেকে চার মিনিট বড়জোর পাঁচ মিনিটের বেশি লাগানো উচিত নয় এবং সপ্তাহে ২-৩ দিন আইস ফেসিয়াল যথেষ্ট।
সংবেদনশীল ত্বকের জন্য সাবধানতা: যদি আপনার ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়, তবে আইস ফেসিয়াল করার আগে একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
বরফ ফেসিয়াল একটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর পদ্ধতি যা ঘরে বসেই করা সম্ভব। নিয়মিত বরফ ফেসিয়াল করলে ত্বক দীর্ঘদিন সতেজ ও তারুণ্য ধরে রাখা যায়। তাই ত্বকের যত্নে এই ছোট্ট অভ্যাস যোগ করুন, এবং উপভোগ করুন সজীব ও সুন্দর উজ্জলতপূর্ণ ত্বক।