xiaomi redmi note 15 pro plus নিয়ে বাজারে আগ্রহ যেন থামছেই না। গত কয়েক বছরে রেডমি নোট সিরিজের ফোনগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তেমনি প্রযুক্তি অনুরাগীদের কাছেও এটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন এই মডেলটি নিয়ে গুঞ্জন ছিল অনেকদিন, অবশেষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেক ওয়েবসাইটে হাতে কলমে কিছু তথ্য ফাঁস হওয়ায় বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়েছে অনেক কিছু।
শাওমির রেডমি সিরিজ সব সময়ই পরিচিত হয়েছে ভালো ফিচার কম দামে দেওয়ার জন্য। তাই মানুষ যখন শুনলো redmi note 15 pro plus আসছে, তখনই কৌতূহল বেড়ে যায় সবার মনে আসলে এবার নতুন কী থাকতে যাচ্ছে এই ফোনে? প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ ফোনে প্রথম নজর কাড়বে এর বড় ব্যাটারি। ৭০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার ব্যাটারি রাখা হয়েছে, যা এ পর্যন্ত রেডমি সিরিজে সবচেয়ে বড়। ব্যবহারকারীরা দিনে দিনে ব্যাটারির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন দীর্ঘ সময় গেম খেলা, ভিডিও দেখা কিংবা কাজের জন্য ফোন ব্যবহার সবকিছুতেই এখন ব্যাটারি লাইফ একটি বড় চিন্তার বিষয়। আর সেখানে xiaomi redmi note 15 pro plus যেন একধাপ এগিয়ে গেল।
ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৯০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সুবিধা। এর মানে, বড় ব্যাটারি থাকা সত্ত্বেও চার্জ দিতে বেশি সময় লাগবে না গ্রহক দের। আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো রিভার্স চার্জিং। অর্থাৎ আপনার বন্ধুর ফোনে চার্জ না থাকলে এই ফোন দিয়েই চার্জ দিতে পারবেন। বিশেষ করে ভ্রমণ বা জরুরি পরিস্থিতিতে এটি অনেক কার্যকর ফিচার হবে দারুন।

ডিসপ্লের দিকে তাকালে আরও অবাক হতে হয়। ফোনটিতে থাকছে চারপাশে বাঁকানো OLED ডিসপ্লে। সাধারণ ফ্ল্যাট ডিসপ্লের থেকে এই ধরনের স্ক্রিন দেখতে আরও আকর্ষণীয় লাগে এবং হাতে নিলেই পার্থক্য টের পাওয়া যায়। স্ক্রিনের রঙ, উজ্জ্বলতা এবং ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল সব দিক থেকেই উন্নত করার চেষ্টা করেছে শাওমি।
এবার আসা যাক ক্যামেরায়। redmi note 15 pro plus মডেলে মূল ক্যামেরা হিসেবে থাকছে ৫০ মেগাপিক্সেলের সেন্সর। এর সঙ্গে থাকছে আরও একটি ৫০ মেগাপিক্সেলের টেলিফটো লেন্স, যা দিয়ে জুম করে ছবি তোলার অভিজ্ঞতা হবে আলাদা। ছবি প্রিয় ব্যবহারকারীদের জন্য এই সেটআপ দারুণ আনন্দের। বিশেষ করে ভ্রমণের সময় বা বাইরে কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে যখন দূর থেকে ছবি তুলতে হয়, তখন এই টেলিফটো লেন্স বড় সহায়ক হবে বলা যায়।

প্রসেসর নিয়ে টেকপ্রেমীদের কৌতূহল সবচেয়ে বেশি। এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে কোয়ালকমের নতুন Snapdragon 7s Gen 4 চিপসেট। শোনা যাচ্ছে, এটি আগের প্রজন্মের তুলনায় দ্রুত কাজ করবে এবং বিদ্যুৎ খরচও কম হবে। ফলে গেম খেলা বা ভারী অ্যাপ ব্যবহার করার সময় ফোন গরম হয়ে যাওয়া কিংবা হ্যাং হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। পাশাপাশি RAM-এর দিক থেকেও চমক থাকছে সর্বোচ্চ ১৬ জিবি র্যাম পাওয়া যেতে পারে। যা দিয়ে মাল্টিটাস্কিং হবে আরও সহজ আরও নিখুঁত।

কেবল এই ফিচারগুলিই নয়, ফোনটিতে থাকছে আরেকটি নতুনত্ব স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি। BeiDou স্যাটেলাইট ব্যবস্থার মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকলেও ব্যবহারকারীরা জরুরি বার্তা পাঠাতে পারবেন। পাহাড়ি এলাকায় বা দুর্গম স্থানে ভ্রমণকারীদের জন্য এটি অত্যন্ত দরকারি ফিচার। কারণ অনেক সময় নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না, আর তখন এই প্রযুক্তিই হতে পারে ভরসার আরেক নাম।
ডিজাইনের দিকে তাকালে দেখা যায়, ফোনটির গ্লাস ফিনিশ অনেকটা প্রিমিয়াম লুক দিয়েছে। হাতে নিলেই বোঝা যায় এটি কেবল সাধারণ স্মার্টফোন নয়, বরং উচ্চমানের কিছু রাখার চেষ্টা করেছে শাওমি। একই সঙ্গে এটি জল ও ধুলো প্রতিরোধী, কারণ এতে যুক্ত হয়েছে IP68 সার্টিফিকেশন। ফলে হালকা পানিতে পড়লেও বা ধুলোবালিতে গেলেও তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
xiaomi redmi note 15 pro plus মূলত রেডমি নোট ১৫ সিরিজের একটি বিশেষ মডেল। একই সিরিজে রয়েছে redmi note 15 এবং redmi note 15 pro মডেল। এদের মধ্যে পার্থক্য মূলত ব্যাটারি ক্ষমতা, প্রসেসর এবং ক্যামেরায়। যারা তুলনামূলক কম দামে ভালো অভিজ্ঞতা নিতে চান, তাদের জন্য থাকবে বেস মডেল redmi note 15। আর যারা একটু বাড়তি পারফরম্যান্স ও প্রিমিয়াম ফিচার চান, তাদের জন্য থাকবে redmi note 15 pro plus।
বাজারে এ ফোনের দাম নিয়েও আলোচনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২১ আগস্ট ২০২৫ ফোনটি বাজারে লঞ্চ হতে পারে এবং বাংলাদেশে সেপ্টেম্বরের দিকে লঞ্চ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপীয় বাজারে এর দাম হতে পারে ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে দাঁড়ায়। যদিও সঠিক দাম প্রকাশের পরই পরিষ্কার হবে। তবে শাওমি সব সময়ই প্রতিযোগিতামূলক দামে ফোন বাজারে আনে। তাই অনেকেই আশা করছেন, বাংলাদেশে দাম কিছুটা কম হবে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই ফোনটি কার জন্য? সহজ করে বললে, যারা একবার চার্জ দিয়ে সারাদিন নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে চান, যারা ভ্রমণ করেন অনেক, কিংবা যারা ছবি তোলা এবং ভিডিও বানানোর জন্য ফোনকে সঙ্গী করেন তাদের জন্য এই ফোন আদর্শ হতে পারে রেডমির এই ফোনটি। আবার গেমারদের জন্যও এটি ভালো পছন্দ হবে এটাই নিশ্চিত, কারণ প্রসেসর আর র্যাম মিলিয়ে গেমিং অভিজ্ঞতা হবে স্মুথ।
বাংলাদেশে রেডমি ফোনের জনপ্রিয়তা সব সময়ই ছিল বেশি। বিশেষ করে তরুণদের কাছে এটি একপ্রকার ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন ফিচারগুলো দেখে ধারণা করা যায়, এবারও সেই জনপ্রিয়তা বজায় রাখবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই এ ফোন নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত তরুণরা। কেউ বলছে, “এবার তো আর পাওয়ারব্যাংক নিতে হবে না,” আবার কেউ বলছে, “স্যাটেলাইট কানেকশন থাকলে দূর পাহাড়ে গিয়েও সেলফি দেব।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, xiaomi redmi note 15 pro plus হচ্ছে এক ধরনের সম্পূর্ণ প্যাকেজ। এতে একদিকে যেমন রয়েছে শক্তিশালী ব্যাটারি, তেমনি আছে আধুনিক ক্যামেরা, নতুন প্রসেসর, দারুণ ডিসপ্লে আর জরুরি স্যাটেলাইট সুবিধা। যারা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন রেডমির নতুন ফ্ল্যাগশিপের জন্য, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে সুখবর। আর বাংলাদেশি বাজারে ফোনটি আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি নিয়ে হুল্লোড় হবে বলেই অনুমান করা যায়।