নাসার ওয়েব টেলিস্কোপে ইউরেনাসের নতুন উপগ্রহ চাঁদ আবিষ্কার S/2025 U1

A blue-green planet with subtle rings is seen against a starry background, alongside a smaller, glowing celestial body. Text reads S/2025 U1.
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তাদের জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ইউরেনাস গ্রহের চারপাশে একটি নতুন উপগ্রহ বা চাঁদ (S/2025 U1) খুঁজে পেয়েছে। এই নতুন চাঁদটির ব্যাস মাত্র ছয় মাইল (প্রায় ১০ কিলোমিটার) এবং এটি এই গ্রহের পরিচিত চাঁদগুলোর পরিবারে যুক্ত হলো ২৯তম সদস্য হিসেবে অর্থাৎ ইউরেনাসের চাঁদের সংখ্যা এখন ২৮ থেকে বেড়ে ২৯এ পৌঁছেছে। এত ছোট সাইজের এই চাঁদটি এত দিন লুকিয়ে থাকতে পারছিল মূলত এর ছোট আকার এবং আলোকবর্তিকায়নের কম সরলতার কারণে। চিত্রে দেখা যাচ্ছে নাসা কর্তৃক প্রকাশিত একটি ছবি যেখানে নতুন চাঁদটি (লেবেল S/2025 U1) এবং ইউরেনাসের কয়েকটি অন্যান্য চাঁদ ঘনবসতিপূর্ণ দেখানো হয়েছে। এই ছবিটিতে ইউরেনাস নিজেই নীলাভ রঙের একটি গ্রহ হিসাবে কেন্দ্রে এবং তার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা রিং ও চাঁদগুলো দেখা যাচ্ছে। ফ্রেমের বাহিরে ১০টা অবস্থানে সাদা বৃত্তের মধ্যে ছোট্ট আলোকে হাইলাইট করা হয়েছে নতুন আবিষ্কৃত চাঁদটি ওই ছবিতে মোট ১৪টি চাঁদের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে ভেন্ট্রিক্যাল অংশে উল্লেখযোগ্য হলো এই S/2025 U1 এবং আশেপাশের পরিচিত চাঁদগুলো। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই নতুন চাঁদ শনাক্ত করা হয়েছে JWST-এর নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরায় নেওয়া ১০টি করে ৪০ মিনিটের এক্সপোজারের সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে। ক্যালিফোর্নিয়ার সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মারইয়ামে এল্‌-মুতামিদ জানান, নব গ্রহটি ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তোলা ছবি থেকে পাওয়া গিয়েছিল। যদিও এটি এতই ছোট আর অন্ধকার ছিল যে প্রায় ৪০ বছর আগে ভয়েজার-২ মহাকাশযানের ইউরেনাস ফ্লাইবাইয়ের সময়ও এটি দেখতে পায়নি। সহজ কথায় বলতে গেলে, এই ৬ মাইল বা ১০ কিলোমিটার মাত্র ব্যাসের চাঁদটির আলো এতই হতাশা (dim) যে আগের কোনও যন্ত্রপাতি এটিকে চিহ্নিত করতে পারেনি।
An image of Uranus with its rings taken by the James Webb Telescope. A new moon, labeled "S/2025 U1," is highlighted. Surrounding moons are labeled: Miranda, Puck, Juliet, and others.
uranus new moon S2025 U 1 2025
ইউরেনাসে নতুন উপগ্রহ চাঁদ প্রযুক্তিগত ভাষায় S/2025 U1 নামে ডাকা হচ্ছে। এটি গ্রহটির কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৫ হাজার মাইল (প্রায় ৫৬ হাজার কিলোমিটার) দূরে একটি প্রায় বৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরছে। কক্ষপথের দৈর্ঘ্য খুব বেশি না হওয়ায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর চারপাশে হেঁটে ঘুরে যেতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। অর্থাৎ, ধরুন আপনি খুব দ্রুত হেঁটে যান, তাহলে এই চাঁদের পুরো পরিধি অতিক্রম করতে মাত্র দু’ঘণ্টা সময় লাগবে। এত ছোট এবং অতিশয় গাঢ় চাঁদটির আবিষ্কার সত্যিই অনবদ্য। বিজ্ঞানীরা এও বলছেন যে এই আবিষ্কার আমাদের ইউরেনাসের ইতিহাস বোঝার আরও নতুন দিক খুলে দেবে। ইউরেনাসের অভ্যন্তরীণ চাঁদগুলোর সংখ্যা এতটাই বেশি যে এই গ্রহের মতো আর কোনো গ্রহে এতগুলো ক্ষুদ্র চাঁদ নেই। মার্কিন SETI ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ম্যাথু টিসকারেনো জানান, ইউরেনাসের ক্ষুদ্র চাঁদগুলো এবং রিংগুলোর জটিল সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করে যে এই গ্রহের অতীতে অনেক বিশৃঙ্খল ও অস্থির ঘটনা ঘটেছে তার কথায়, “যে নতুন চাঁদ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটি আগের সবচেয়ে ছোট চাঁদের থেকেও ছোট এবং খুব ফিকিয়ে থাকা” । এই শোনা কম আলো ছড়ানো চাঁদটুকু এতটাই অস্পষ্ট যে হয়তো এর আরও অনেক রহস্য এখনো অজানা থেকে যেতে পারে। নামকরণ প্রসঙ্গেও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) নিয়োজিত থাকবে। ইউরেনাসের অন্যান্য সব চাঁদের নাম শেক্সপিয়র ও আলেকজান্দ্রা পোপের সাহিত্যকর্মের চরিত্র অনুযায়ী রাখা হয় নতুন আবিষ্কৃত এই চাঁদটির এখনো কোনো নাম দেওয়া হয়নি। IAU এই আবিষ্কারকে অনুমোদন করলে তারপরই এর জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক নাম ঠিক করা হবে। এমন খবরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা মহলে একটা দোলা পড়ে গেছে। ১৯৮৬ সালে ভয়েজার-২ প্রথমবার ইউরেনাসের  কাছে দিয়ে উড়ে গেলেও তখন এই নতুন উপগ্রহ চাঁদটি ধরা পড়েনি, কারণ তা এতটাই ছোট ছিল। কিন্তু প্রায় চার দশক পরেই নাসার সর্বাধুনিক ওয়েব টেলিস্কোপ সেটি দেখে ফেলল। এই আবিষ্কার বলছে, আমাদের সৌরজগতের অনেক অজানা অধ্যায় এখনও উন্মোচন করা বাকি রয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ওয়েব টেলিস্কোপের মতো শক্তিশালী যন্ত্রের সাহায্যে ইউরেনাস এবং এর আশপাশের অন্য রহস্যও ধীরে ধীরে উদঘাটিত হবে। উল্লেখ্য, ইউরেনাস আমাদের সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ। পৃথিবীর চেয়ে প্রায় চার গুণ বড় এই বরফজাত গ্রহটি সূর্য থেকে প্রায় ৩০০ কোটি কিলোমিটার দূরে, অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সতের-আঠারের মতো বহু গুণ বেশি দূরে অবস্থিত। এত দুরত্বের কারণে ভারি রকেট দিয়ে যদিও এখনো কোনো পরোক্ষ মিশন গড়ানো যায়নি, তবুও দূরবীক্ষণের সাহায্যে ধীরে ধীরে এ গ্রহের গোপনীয়তাগুলো উদ্ঘাটিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়েব টেলিস্কোপের মাপকাঠিতে নামা এ চাঁদের আবিষ্কার এক মহাকাশময় উপহার, যা ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহ অন্বেষণের মতোই আমাদের কৌতূহল জাগায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top