স্টেম সেল দিয়ে আবিষ্কার হলো কৃত্রিম মানব ত্বক!

Scientists in lab coats and gloves examine a Petri dish with Stem cells artificial skin image, set against screens displaying DNA structures, in a futuristic lab setting. স্টেম সেল দিয়ে আবিষ্কার হলো কৃত্রিম মানব ত্বক.

সাম্প্রতিক স্টেম সেল দিয়ে আবিষ্কার হলো কৃত্রিম মানব ত্বক। এক গবেষণায় অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এই অসাধারণ সাফল্যের খবর দিয়েছেন এটি পৃথিবীর প্রথম ‘সম্পূর্ণ কার্যকর’ ল্যাব-নির্মিত মানব ত্বক, যা প্রকৃত ত্বকের সব গঠনশৈলী নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে এই কৃত্রিম ত্বকে রয়েছে রক্তনালী, লোমকূপ, স্নায়ু, ত্বকের স্তর এবং রোগ প্রতিরোধী কোষ ঠিক প্রকৃত ত্বকের মতোই সব উপাদান আছে এই ত্বকে। এগুলো মিলে এটিকে এখন পর্যন্ত তৈরি সব কৃত্রিম ত্বকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণবন্ত ও বাস্তবসম্মত মডেল করে তুলেছে।

গবেষকরা প্রথমে স্বাভাবিক মানুষের ত্বকের কোষকে Stem Cells এ রূপান্তর করেন। এরপর এই স্টেম সেলগুলোকে পেট্রি ডিশে রেখে ত্বকের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করা হয়, যাকে ‘স্কিন অর্গানয়েড’ বলা হয় এর পর একই ধরণের স্টেম সেল ব্যবহার করে ক্ষুদ্র রক্তনালী তৈরি করে ওই ত্বকের নমুনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। রক্তনালী যুক্ত হওয়ার পর অঙ্গাণুগুলো স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হতে থাকে, ফলস্বরূপ তৈরি হয় একটি জীবন্ত কৃত্রিম ত্বক যা প্রকৃত ত্বকের মতোই কাজ করে।

Close-up of hands holding a translucent, flexible sheet resembling Stem cells artificial skin. The texture is smooth and slightly shiny, evoking curiosity and intrigue.
Stem cells artificial skin (Supplied)

এই গবেষণায় তৈরি কৃত্রিম ত্বকে এমন সব গঠন রয়েছে যা সাধারণত একটি স্বাভাবিক ত্বকে থাকে। নিরাপদ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন আবিষ্কার করা কৃত্রিম ত্বকের ভেতরে রয়েছে রক্তনালী, স্নায়ু, লোমকূপ, পিগমেন্টযুক্ত কোষ, রোগপ্রতিরোধী কোষ এবং ত্বকের বিভিন্ন স্তর। অর্থাৎ, চামড়া ক্রিয়া-কলাপের জন্য প্রয়োজনীয় সব গঠন একত্রে এই ত্বকে পাওয়া যাবে যা আগে কখনও সফল হয়নি।

গবেষণার প্রধান আব্বাস শাফি জানিয়েছেন,এ পর্যন্ত তৈরি সব কৃত্রিম ত্বকের মধ্যে এটি সবচেয়ে প্রাণবন্ত মডেল’। তিনি বলেন, নতুন এই ত্বকের সাহায্যে ত্বকের জটিল রোগগুলো আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে এবং নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির পরীক্ষাও করা সম্ভব হবে। সহ-লেখক অধ্যাপক কিয়ারাশ খোসরোতেহরানি উল্লেখ করেন, সোরিয়াসিস, অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা স্ক্লেরোডার্মার মতো কঠিন রোগের ক্ষেত্রেও এই কৃত্রিম ত্বক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এই ধরণের দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের রোগগুলোর গবেষণায় এখনো সীমাবদ্ধতা আছে, তাই নতুন এই মডেল নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেকটাই আশাবাদী।

গবেষণা কাজটি করতে বিজ্ঞানীদের ছয় বছর লেগেছে। এর ফলাফল আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘অ্যাডভান্সড হেলথকেয়ার ম্যাটেরিয়ালস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। মানে খসড়াগুলো এখন শুধুই গবেষণার পর্যায়ে; এখনো বাস্তব রোগীর শরীরে এটা বসানো হয়নি। গবেষকরা বলছেন, ধীরে ধীরে পরীক্ষামূলক ভাবে একে বাস্তব প্রয়োগের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।

Two scientists in white lab coats and safety goggles stand in a lab, smiling. Both wear blue gloves and are positioned near lab equipment, conveying a sense of teamwork.
stem cells artificial skin lab image (Supplied)

বর্তমানে ত্বকের বড় ক্ষতের জন্য প্রচলিত চিকিৎসা হলো ‘স্কিন গ্রাফটিং’  তথা আগুনে দগ্ধ বা বুড়ো ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে চামড়া কেটে ক্ষতস্থানে বসিয়ে দেয়া হত এত দিন। তবে এতে রোগীর শরীরের অপর অংশের ত্বক সচ্ছল থাকে না। গবেষকেরা বলছেন, নতুন কৃত্রিম ত্বক এই সমস্যারই সমাধান আনতে পারে। কারণ এতে স্বাভাবিক মানব ত্বকের মতোই নিজস্ব রক্তনালী রয়েছে। দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিবেদনে উল্লেখ, “কৃত্রিম হলেও এই ত্বকে নিজের শরীরেরই রক্ত বইবেমানে গ্রাফট করার পর এটি স্বাভাবিকভাবেই জীবন্ত থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগী বা ত্বকের অন্য যেকোনো ক্ষতস্থানে একদম প্রকৃত চামড়ার মতো এই কৃত্রিম ত্বক ব্যবহার করা যেতে পারে।

গবেষকরা আশা করছেন এই ত্বক দিয়ে জিনগত ত্বকের রোগ যেমন দূর্বল সোরিয়াসিস বা অন্য দুর্লভ রোগগুলি পরীক্ষা করতে সুবিধা হবে। Frazer Institute এর প্রফেসর খোসরোতেহরানি বলছেন, “এই ত্বক মডেল তৈরি করার ফলে পৃথিবীর যেকোনো জটিল ত্বকের রোগের নতুন সমাধান খুঁজে বের করার পথ খুলে যাবে”। তিনি আরো জানান, নতুন এই ত্বকে স্নায়ু ও চুলের কূপ ছাড়া ঘাম ছাড়ার গ্রন্থিও রয়েছে, তাই একদিন গ্রাফটে ব্যবহার করলে ত্বকে বশেস অনুভূতি আসবে, চুল গজাবে আর ঘামও ঝরবে। এগুলো সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে মাএ চিকিৎসায় নয়, গবেষণার মাধ্যমেও বিপ্লব আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Gloved hands hold a translucent, flexible, white sheet, possibly biotech or medical material, against a softly blurred background, conveying precision and care. স্টেম সেল দিয়ে আবিষ্কার হলো কৃত্রিম মানব ত্বক.
artificial human skin being developed from stem cells

জানা যায়, এই ধরনের ত্বক এগুলো এখন শুধু প্রক্রিয়াগুলিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যখন সবকিছু ঠিকঠাক হবে, তখন ঘরোয়া পর্যায়ে হয়তো স্কিন গ্রাফটের জায়গায় ডাক্তারেরা এই কৃত্রিম ত্বক ব্যবহার শুরু করবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা নিয়েই একগুচ্ছ পরীক্ষা চালিয়ে যাবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে মানুষের শরীরে বসানো হলে ত্বকটি ঠিক কাজ করবে।

সবমিলিয়ে, Stem Cellsর সাহায্যে কৃত্রিম মানব ত্বকের এই সাফল্যকে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিয়মিত ভাষায় বলা যায়, ভবিষ্যতে আর দগ্ধ রোগী বা ত্বকের জটিল রোগে ভুগতে হবে না, কারণ এখন গবেষকরা ইতোমধ্যে মানুষের মতোই আসল ভাবেই কাজ করে এমন একটি ত্বক তৈরি করে ফেলেছেন, যা নির্ভয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে মানব শরীরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top