Russian cancer vaccine রাশিয়ার ‘এন্টেরোমিক্স’ টিকায় ক্যান্সার নিরাময়ে সম্ভাবনা!

Two doctors in lab coats hold a glass container together in a modern lab, flanking an official in a suit, suggesting collaboration and innovation. Russian Cancer Vaccine.

বিশ্ব ক্যান্সার গবেষণায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে Russian cancer vaccine, যা প্রথম মানব ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অভূতপূর্ব সাফল্যের দাবি করেছে। গত বছর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, বিজ্ঞানীরা ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরি করার খুব কাছে চলে এসেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ‘Russia cancer vaccine’ হিসেবে পরিচিত এই প্রতিরোধকটি প্রাথমিক পরীক্ষায় ১০০% কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা প্রদর্শন করেছে। এটি ২০২৫ সালের জুনে সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে (SPIEF) ঘোষণা করা হয়, এবং বিশেষজ্ঞরা এটিকে ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি গেম-চেঞ্জার বলে অভিহিত করেছেন।

নতুন এই ভ্যাকসিনকে অত্যাধুনিক উদ্ভাবনা বলা হচ্ছে, কারণ এটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মতো mRNA প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীর দেহকে ক্যান্সার কোষ চিনতে শেখায়। প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি লক্ষ্যভিত্তিক থেরাপি যা টিউমার কোষগুলোকে সরাসরি লক্ষ্যমাত্রা করে, ফলশ্রুতিতে প্রচলিত কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের তুলনায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম। এমন নতুন Russian cancer vaccine উদ্ভাবনের খবর বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে; আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও ব্লগগুলো ‘Russia cancer vaccine’ ট্যাগ ব্যবহার করে এই উদ্ভাবনের কথা উল্লেখ করেছে এবং বহু সংবাদমাধ্যম ‘russia announces cancer vaccine’ শিরোনামে এটি প্রচার করেছে। অনেকে ‘cancer vaccine russia’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এন্টারোমিক্স ভ্যাকসিনের কাজের পদ্ধতি দারুণ, এটি রুশ গবেষণা কেন্দ্রের উন্নত তত্ত্বাবধানে চার ধরনের নিরাপদ ভাইরাসের সমন্বয়ে তৈরি, যেগুলো কেবল ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে সক্ষম। ভ্যাকসিনটি রোগীর স্ব-স্ব টিউমারের mRNA অংশ ব্যবহার করে তৈরি, যাতে এটি একটি বিশেষ প্রোটিন তৈরি করতে রক্তের কোষকে প্রেরণা দেয়, সেই প্রোটিন টিউমারের সেলের পৃষ্ঠস্থ বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করে, ফলে রোগীর ইমিউন সিস্টেম সহজেই ক্যান্সার কোষগুলোকে চিনে নেয়। অন্যদিকে, রোগীর স্বাভাবিক কোষগুলো কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এবং শরীরের অন্যান্য অংশ নিরাপদ থাকে। গবেষকদের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, এই অনন্য প্রযুক্তিতে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া রোগীরা মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পেরেছেন।

A vial labeled "Cancer mRNA Vaccine" and a syringe with an orange cap lie on a light blue surface, symbolizing hope and scientific progress in cancer treatment.
Russia announces cancer vaccine

রেডিওলজিক্যাল সেন্টার জানায়, এই উপায়ে প্রাক-বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় টিউমারের বৃদ্ধি ধীর হয়েছে, এমনকি সম্পূর্ণ ধ্বংস পর্যন্ত অবস্থা দেখা গেছে। এই mRNA-ভিত্তিক পদ্ধতিতে টিউমার-নির্দিষ্ট কোড ইনজেক্ট করলে কেমো বা রেডিয়েশনের থেকে অনেক কম রাসায়নিক প্রয়োগ প্রয়োজন হয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। প্রাথমিক পর্যায়ের Phase-I ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৪৮ জন স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেয়। পরীক্ষার শেষে দেখা গেছে অধিকাংশ রোগীর ক্যান্সারের টিউমার উল্লেখযোগ্যভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে অথবা তাদের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে।

বেশকিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের কেউ গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখাননি, সর্বোচ্চ মাত্রায় সাময়িক জ্বর বা ইনজেকশনের জায়গায় হালকা ব্যথা ছাড়া বড় কোনো সমস্যা হয়নি। রুশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে এন্টারোমিক্স ভ্যাকসিন এখন ক্লিনিকাল ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত এবং শীঘ্রই রাষ্ট্রীয় অনুমোদন মিললে সাধারণ প্রয়োগে আনা হবে। উল্লেখ্য, প্রথম পরীক্ষার সফলতার পর আরও বৃহত্তর পরিসরের ট্রায়াল পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা আরও যাচাই করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, এই ভ্যাকসিনটির প্রথম সংস্করণটি কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের জন্য তৈরি করা হয়েছে, এর পরবর্তী সংস্করণগুলো মস্তিষ্কের গ্লায়োব্লাস্টোমা এবং ত্বকের মেলানোমার মতো রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে। FMBA-ও জানিয়েছে, এন্টারোমিক্স পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা পাওয়া গেছে, এটি টিউমার সঙ্কুচিত করতে সক্ষম এবং একাধিকবার প্রয়োগের পরেও নিরাপদ।

রাশিয়ার এই অর্জন আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ডেকেছে। Tribune-এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গ্লোবাল অনকোলজি সম্প্রদায় এই অগ্রগতি মনোযোগ দিয়ে দেখছে। অনেক গবেষক মনে করছেন, যদি এই ফলাফল দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষায়ও একই থাকে তবে এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় বৈপ্লবী পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে মাত্র ৪৮ জনের পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। এছাড়া, বিশ্বজুড়ে বহু বায়োটেক কোম্পানিও ব্যক্তিগত mRNA ক্যান্সার ভ্যাকসিন নিয়ে প্রতিযোগিতায় রয়েছে উদাহরণস্বরূপ, জার্মানির BioNTech, CureVac এবং মার্কিন Moderna ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের জন্য mRNA ভ্যাকসিন নিয়ে প্রাথমিক ট্রায়াল করছে। আমেরিকা-ইউরোপের নিউজপোর্টালগুলোতেও ‘russia announces cancer vaccine’ শিরোনামে একই খবর প্রচার করেছে এবং অনলাইন সার্চ ইঞ্জিনে ‘cancer vaccine russia’ অনুসন্ধানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

A speaker stands at a podium with microphones, addressing an audience at a technology forum, set against a blue backdrop.
Putin says Russia close to making cancer vaccines.

এদিকে, বৈশ্বিক পর্যায়েও ক্যান্সার ভ্যাকসিন নিয়ে তৎপরতা চোখে পড়ছে। যুক্তরাজ্য সরকার জার্মানির BioNTech-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যক্তিগতকৃত ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আগামী ২০২৩ সালে ১০ হাজার রোগীর জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানো হবে। মার্কিন Moderna ও Merck-এর পরীক্ষামূলক ক্যান্সার ভ্যাকসিনে দেখা গেছে, তিন বছরের মধ্যে মেলানোমা রোগের পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই মানবদেহের HPV ভাইরাসজনিত কিছু ক্যান্সারের জন্য ছয়টি ভ্যাকসিন অনুমোদিত রয়েছে এবং B-হেপাটাইটিস ভাইরাস প্রতিরোধেও ভ্যাকসিন রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এরকম একটি Russian cancer vaccine আবিষ্কার আন্তর্জাতিক গবেষণা দিশা বদলাতে পারে।

ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে “ক্যান্সার ভ্যাকসিন” শব্দটি শুনে অনেকেই প্রথমে রোগ প্রতিরোধক টিকাকে কল্পনা করে থাকেন। তবে এন্টারোমিক্সের মত ভ্যাকসিনগুলো থেরাপিউটিক অর্থে কাজ করে। এটি বিরল ভাইরাসজাতীয় কোড ব্যবহার করে রোগীকে শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম তৈরি করতে শেখায়। উদাহরণস্বরূপ, HPV ভাইরাসজনিত গাইনোকলজিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আছে, যা ভ্রুণ/কামড়ের জন্য ব্যবহৃত হয়; অন্যদিকে এন্টারোমিক্সের মত ভ্যাকসিনগুলো ইতিমধ্যেই দেহে বিদ্যমান ক্যান্সার কোষকে টার্গেট করে। এই পদ্ধতিতে ক্যান্সার কোষের জিনগত তথ্য ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরি করা হয় এবং রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করা হয়। এর ফলে রোগীর শরীর স্বাভাবিক কোষগুলো অক্ষত রেখে টিউমার কোষ লক্ষ্যভিত্তিকভাবে মোকাবিলা করে, যা chemotherapy বা রেডিয়েশনের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ পর্যবেক্ষিত হচ্ছে।

এন্টারোমিক্স আসলে একটি অনকোলাইটিক ও mRNA ভিত্তিক ক্যান্সার ভ্যাকসিন। এটি রোগীর নিজ টিউমারের জিনগত কোড ব্যবহার করে তৈরি হওয়ায় সম্পূর্ণ ‘ব্যক্তিগতকৃত’। mRNA এক ধরনের অস্থায়ী বার্তাপ্রবাহকারী অণু, যা কোষকে বলতে পারে কী কী প্রোটিন তৈরি করতে হবে। এই ভ্যাকসিনের mRNA কোড শরীরের কোষে ঢুকলে একটি বিশেষ প্রোটিন প্রস্তুত করে, যা টিউমার কোষের বিশেষ অণুগুলোর সঙ্গে মেলে ফলে রোগীর টি-সেল ইমিউন সিস্টেম সহজেই ক্যান্সার কোষ চিনতে পারে। এই প্রযুক্তি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মতই হলেও, ক্যান্সারের জন্য এন্ট্রোলাইটিক (ক্যান্সারনাশক) ভাইরাস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্বে ইতিমধ্যেই CureVac, Moderna, BioNTech এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিগত mRNA ক্যান্সার ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে; Enteromix উল্লিখিত মডেল সেই প্রচেষ্টার অংশ।

ভ্যাকসিন উদ্বেলতার পাশাপাশি সতর্কবার্তা: যদিও ফলাফল এখন পর্যন্ত অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক, তথাপি বিশেষজ্ঞরা সাবধানতা অবলম্বনে জোর দিচ্ছেন। তারা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে ছোট মাত্র ৪৮ জনের পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফল থেকে বড় ফলাফলের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। ইতিহাসে বহু ক্লিনিকাল পরীক্ষায় প্রথম পর্যায়ে ভালো ফল আসার পর পরবর্তী পর্বে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে, তাই গবেষকরা দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল দেখার পরামর্শ দিচ্ছে। এছাড়া, এই পদ্ধতিটি প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা হওয়ায়, উৎপাদন ব্যয় ও সময় অনেক বেশি, অর্থাৎ গণপ্রয়োগে এটি সময়সাপেক্ষ ও জটিল হতে পারে। বর্তমানে রাশিয়ায় এর অনুমোদন ও উৎপাদন বাকি থাকায় এটিকে সবাই মিলে পেতে আরও অপেক্ষা লাগবে; তাই বিশ্বজুড়ে অনেকে বলে চলেছেন যে, অতিমাত্রায় উল্লাস করার আগে সব তথ্য যাচাই করা জরুরি।

এই আবিষ্কার সফল প্রমাণিত হলে ক্যান্সার চিকিৎসায় এক নতুন অধ্যায় সূচিত হতে পারে। Enteromix এর মত ভ্যাকসিনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে chemo ও radiation-এর পাশাপাশি ব্যক্তিগতকৃত ইমিউনোথেরাপি বহুল ব্যবহৃত হবে। এমন ভ্যাকসিন রোগীর শরীরে অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক কমায় ও অতিরিক্ত বিষাক্ততা এড়ায়, ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়। তবে এর জন্য উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি, শক্তিশালী শীতল শৃঙ্খলা এবং জিনোম বিশ্লেষণে দক্ষতার প্রয়োজন হবে। তারপরও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এটিকে মহামূল্যবান অগ্রগতি মনে করছে, কারণ এটি ভবিষ্যতে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ প্রতিরোধে নতুন গতি যোগ করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top