টেক্সাসে আবারও ইলন মাস্কের স্পেসএক্স বিপর্যয় ঘটেছে! SpaceX

A rocket launching on the left with flames and smoke creating a dramatic and inspiring scene against a clear sky. স্পেসএক্স বিপর্যয়.

আবারও ইলন মাস্কের স্পেসএক্স বিপর্যয় ঘটেছে। রবিবার রাতে টেক্সাসের বোকা চিকা থেকে স্টারশিপ নামের বিশাল রকেটটি মহাকাশে ওড়ার কথা ছিল। সবকিছু প্রস্তুত থাকলেও শেষ মুহূর্তে উৎক্ষেপণ বাতিল হয়ে যায় স্পেসএক্স। নাসার ইতিহাসে যেমন বারবার টেস্ট বাতিল হতে দেখা গেছে, তেমনি স্পেসএক্সও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলো। এই বাতিল হওয়া যেন বাব় বাব় নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় , মহাকাশযাত্রা কোনো সহজ কাজ নয়, বরং প্রতিটি ধাপেই রয়েছে কঠিন পরীক্ষা।

স্পেসএক্স জানিয়েছে, গ্রাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা ধরা পড়ায় তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রকেটটি উড়তে পারেনি। সময়মতো ঠিক না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। তাই শেষ মুহূর্তে তারা উৎক্ষেপণ থামিয়ে দেয়। অনেকেই রাতভর লাইভ স্ট্রিমে চোখ রেখেছিলেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়েছেন। কিন্তু এই হতাশার পেছনে রয়েছে নিরাপত্তা আর প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা।

স্টারশিপ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রকেট। এর উচ্চতা প্রায় ৪০০ ফুটেরও বেশি, যা চোখের সামনে দাঁড়ালে আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে বলে মনে হয়। ইলন মাস্ক স্বপ্ন দেখছেন, এই রকেট দিয়েই মানুষকে মঙ্গলগ্রহে পাঠানো হবে। এমনকি চাঁদেও আবার মানুষ নামবে এই স্টারশিপের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বারবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে এবং প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায় নতুন কোনো সমস্যার মুখে পড়ছে।

এবারের বাতিল হওয়া পরীক্ষার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন কেন বারবার একই ধরণের সমস্যায় স্পেসএক্স বিপর্যয় এ আটকে যাচ্ছে SpaceX। বছরের শুরু থেকেই স্টারশিপকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু মার্চ, মে আর জুনে কয়েকটি টেস্টে বড়সড় বিপর্যয় ঘটেছিল। জুন মাসের এক পরীক্ষায় এমনকি বিস্ফোরণও হয়, যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে পুরো দুনিয়ায়। এবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখিয়ে পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় সাধারণ দর্শকদের হতাশা আরও বেড়েছে।

স্পেসএক্স অবশ্য বলছে, প্রতিটি ব্যর্থতার মধ্যেই শেখার জায়গা আছে। রকেট বিজ্ঞানে প্রতিটি ছোট ভুলও অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। অন্যদিকে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই শেখার প্রক্রিয়াটাই অতি দীর্ঘ হচ্ছে। কারণ কয়েক মাস ধরে তারা একটার পর একটা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, অথচ এখনো নির্ভরযোগ্যভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ ফ্লাইটও শেষ করতে পারছে না।

তবুও ইলন মাস্ক হাল ছাড়েননি। তিনি জানিয়েছেন, এই ব্যর্থতার পরও তারা দ্রুত সমস্যার সমাধান খুঁজবেন এবং খুব শিগগিরই আবার উৎক্ষেপণের চেষ্টা করবেন। সোমবারকেই সম্ভাব্য পরবর্তী তারিখ হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময় জানানো হয়নি।

A large rocket stands vertically against a backdrop of a cloudy sky during sunset, casting a soft, glowing light. The scene conveys a sense of anticipation and innovation. স্পেসএক্স বিপর্যয়.
SpaceX picture

স্টারশিপ শুধু একটি রকেট নয়, বরং ইলন মাস্কের ভবিষ্যৎ মহাকাশযাত্রার পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি বিশ্বাস করেন, এই রকেট সম্পূর্ণভাবে পুনঃব্যবহারযোগ্য হবে। অর্থাৎ প্রতিবার উৎক্ষেপণের পর ফেলে দিতে হবে না, বরং আবার ব্যবহার করা যাবে। এতে খরচ কমবে এবং মহাকাশে নিয়মিত যাতায়াত সম্ভব হবে। কিন্তু এই প্রযুক্তি পুরোপুরি কার্যকর করতে গেলে আরও অনেক সফল পরীক্ষা দরকার।

স্পেসএক্স বিপর্যয় ঘটেছে এটা শুধু ব্যর্থতাগুলো শুধু প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাই নয়, মানুষের ধৈর্যেরও পরীক্ষা নিচ্ছে। যারা লাইভে দেখেছেন, তারা হয়তো রাতভর অপেক্ষা করে হঠাৎ শুনেছেন, “উৎক্ষেপণ বাতিল।” বাস্তব জীবনের মতোই এখানে হতাশা স্পষ্ট। তবে বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের কাছে এটি নতুন কিছু নয়। কারণ মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে প্রতিটি অগ্রগতি এসেছে অসংখ্য ব্যর্থতার ভেতর দিয়ে।

ইলন মাস্কের টুইটার বা এক্সে দেওয়া বার্তা অনুসারে, তিনি বিশ্বাস করেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই স্টারশিপ দিয়ে বড় কিছু সম্ভব হবে। অনেকেই বলেন, মাস্ক স্বপ্নবাজ, আবার অনেকে বলেন তিনি বাস্তববাদী উদ্যোক্তা। তবে এ কথা সত্য যে, SpaceX ইতোমধ্যেই মহাকাশ গবেষণাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ফ্যালকন রকেট সফলভাবে অবতরণ করানো থেকে শুরু করে নিয়মিত স্যাটেলাইট পাঠানো পর্যন্ত বহু অর্জন তাদের ঝুলিতে আছে।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন স্টারশিপ নিয়ে এত সমস্যায় পড়ছে? এর উত্তর সহজ নয়। স্টারশিপ পৃথিবীর অন্য যেকোনো রকেটের চেয়ে বড় এবং জটিল। এটিকে চালাতে যে প্রযুক্তি দরকার, তা এখনও পুরোপুরি পরীক্ষিত নয়। প্রতিটি নতুন ফ্লাইটে দেখা দিচ্ছে নতুন কোনো সমস্যা। কোনো ফ্লাইটে ইঞ্জিন ব্যর্থ হচ্ছে, কোনো ফ্লাইটে গ্রাউন্ড সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। আবার কখনও জ্বালানি সিস্টেমে গোলমাল হচ্ছে।

এবারের বাতিল হওয়া লঞ্চটি আসলে দেখিয়ে দিল, স্পেসএক্সকে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। তবুও মহাকাশ গবেষণায় আগ্রহী মানুষেরা জানেন, প্রতিটি ধাপই জরুরি। যেমন আমরা হাঁটতে শেখার আগে বারবার হোঁচট খাই, তেমনি রকেট বিজ্ঞানে এই ব্যর্থতাগুলোও পরবর্তী সফলতার প্রস্তুতি মাত্র।

এখনও নিশ্চিত নয়, কবে নাগাদ স্টারশিপ পুরোপুরি সফল হবে। তবে প্রতিটি বাতিল টেস্টের পরও পৃথিবীর লাখো মানুষ অপেক্ষা করছে পরবর্তী চেষ্টার জন্য। কারণ মানুষের স্বপ্ন এখন আর শুধু আকাশ ছোঁয়া নয়, বরং একদিন সত্যিই মঙ্গলগ্রহে গিয়ে শহর গড়ে তোলা। ইলন মাস্ক সেই স্বপ্নকেই আরও কাছে টানতে চাইছেন।

আবারও ইলন মাস্কের স্পেসএক্সে বিপর্যয় ঘটায় সমালোচনা যেমন বেড়েছে, তেমনি কৌতূহলও বেড়েছে। আগামী দিনে তারা কত দ্রুত সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে, সেটিই হবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। হয়তো আগামীকালই নতুন লঞ্চ হবে, হয়তো আরও কয়েক মাস দেরি। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই দীর্ঘ যাত্রার প্রতিটি ব্যর্থতাই একদিন সফলতার সিঁড়ি হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top