সাদিয়া আয়মান বাংলাদেশের জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় সাদিয়া আয়মানের ভাইরাল এআই ডিপ ফেক ভিডিও ও ভুয়া ছবি নিয়ে তিনি ভক্তদের সতর্ক করেছেন। ২০২৫ সালের ২৯ জুলাই ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, কিছু পেজ আছে যারা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেলিব্রিটিদের ছবি বানায় এবং ছড়ায়। তার কথায়, এসব কনটেন্টকে শুধুমাত্র মজা বলা যায় না, এর পেছনে টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের কাজ মানুষের নৈতিকতার অভাবকে প্রকাশ করে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সাদিয়া আয়মান ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ২০২৫ সালেও অনেক মানুষ এখনও বুঝতে পারে না কোন ছবি বা ভিডিও আসল আর কোনটি এআই দ্বারা তৈরি। এই অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে ভুয়া কনটেন্ট ছড়ানো আরও সহজ হচ্ছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেক ভক্তই এসব ছবিতে মন্তব্য করছেন এবং সেগুলোকে সত্য ভেবে নিচ্ছেন, অথচ এগুলো সম্পূর্ণ কৃত্রিমভাবে তৈরি।

ফেসবুক পোস্টে তিনি ভক্তদের উদ্দেশে একটি স্পষ্ট বার্তা দেন। যদি কোনো ভুয়া ছবি বা ভিডিও চোখে পড়ে, সেটিকে কখনও সত্যি মনে করা যাবে না। তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন ওই ধরনের পোস্ট ও পেজ রিপোর্ট এবং ব্লক করতে। এছাড়া তিনি জানান যে, বিষয়টি তিনি সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের হাতে তুলে দেবেন যাতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। তার ভাষায়, “প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এখনই সচেতন হওয়ার সময়। দয়া করে এসব এআই এডিট করা ছবি বা ভিডিওকে সত্য মনে করবেন না, আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি।”
এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি ভুয়া ছবি ও ভিডিওকে বলা হয় ডিপ ফেক। আন্তর্জাতিকভাবে ডিপ ফেক প্রযুক্তি ইতিমধ্যে বিশাল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বজুড়ে এক বছরেই পাঁচ লাখের বেশি ভিডিও ও ভয়েস ডিপ ফেক হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়েছে। ২০২৫ সালে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। কারণ, এআই অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে এখন খুব সহজেই ডিপ ফেক বানানো যায়। এতে সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় কোনটি সত্যি আর কোনটি মিথ্যা।

এই প্রযুক্তি ব্যক্তিগত সুনামের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যে কোনো সেলিব্রিটি বা সাধারণ মানুষও এর শিকার হতে পারেন। সাদিয়া আয়মানের ভাইরাল এআই ডিপ ফেক ভিডিওর ক্ষেত্রে ও দেখা গেছে, কিছু ভারতীয় মডেলের ছবি এডিট করে তার নামে ছড়ানো হয়েছে। অনুসন্ধানী সংগঠন রিউমর স্ক্যানার নিশ্চিত করেছে যে, ভাইরাল হওয়া সাদিয় আয়মানের ছবি ভিডিও ও ছবিগুলো আসলে তার নয়। এগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি।

ডিপ ফেক প্রযুক্তি শুধু ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করে না, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রচারণা চালানো বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে জনমত প্রভাবিত করাও সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন উদাহরণ পাওয়া গেছে যেখানে এআই দিয়ে তৈরি মিথ্যা ছবি বা ভিডিও রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ভুয়া কনটেন্ট মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং অনেক সময় সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করে।
সাদিয়া আয়মান বলেছেন, তিনি বিষয়টি সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের হাতে দেবেন যাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া যায়। অর্থাৎ, কেউ যদি এআই দিয়ে সত্যিকারের মানুষের মত করে কোনো ছবি বা ভিডিও তৈরি করে তা অপব্যবহারে ছড়ায়, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন—মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডিপ ফেক নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি মামলায় জন ডো অর্ডার জারি করেছে, যেখানে নাম না জানা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও ডিপ ফেক ভিডিও শনাক্ত করে অপসারণের জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট তৈরির কৌশলও উন্নত হচ্ছে, যা সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে।
সাদিয়া আয়মানের ভাইরাল এআই ডিপ ফেক ভিডিও ছবির এই অভিজ্ঞতা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখা যায়। ডিজিটাল যুগে আমাদের সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। কোনো ছবি বা ভিডিও সন্দেহজনক মনে হলে তা যাচাই না করে শেয়ার করা যাবে না। অচেনা উৎসের ভাইরাল কনটেন্টকে সত্য মনে করা উচিত নয়। বরং ওই কনটেন্ট রিপোর্ট করতে হবে যাতে সামাজিক মাধ্যম কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।

ডিপ ফেক প্রযুক্তির কারণে শুধুমাত্র সেলিব্রিটিরাই নয়, সাধারণ মানুষেরও ক্ষতি হতে পারে। মানহানির শিকার হতে পারেন যে কেউ। তাই সমাজের সবাইকে সতর্ক হতে হবে। সচেতনতা এবং আইনগত ব্যবস্থা একসাথে না হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
সাদিয়া আয়মানের বক্তব্য শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, এটি পুরো সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তিনি তার ভক্তদের অনুরোধ করেছেন তারা যেন সচেতন থাকেন এবং ভুয়া ছবি বা ভিডিও দেখলেই রিপোর্ট করেন। তার এই বার্তা আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় যে, প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে। তথ্য যাচাই ছাড়া কিছু বিশ্বাস করা উচিত নয়।
আজকের ডিজিটাল যুগে এআই প্রযুক্তি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এআই যদি সঠিকভাবে ব্যবহার হয়, তা হলে এটি মানুষের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। কিন্তু যখন এটি বিভ্রান্তি ও মিথ্যা প্রচারণার জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন তা ভয়াবহ ক্ষতি করে। সাদিয়া আয়মানের ভাইরাল এআই ডিপ ফেক ভিডিও নিয়ে এই সতর্ক বার্তা আমাদের শেখায়, সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে হবে। আমরা যত বেশি সচেতন হব, ততই প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করা সহজ হবে।