vaxepi gov bd registration 2025 নিয়ে মানুষের আগ্রহ এখন তুঙ্গে। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে টাইফয়েড টিকার বিশাল কর্মসূচি চালু হয়েছে। এই টিকার মাধ্যমে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যারা ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের মধ্যে রয়েছে, তাদের সবাইকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। নিবন্ধনের জন্য আলাদা ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে, নাম vaxepi.gov.bd। সেখানে প্রবেশ করে জন্ম নিবন্ধনের ১৭ সংখ্যার আইডি দিয়ে নাম লিখিয়ে নিতে হবে। নাম লেখানো শেষ হলে একটি টিকা কার্ড ডাউনলোড করা যাবে, আর সেই টিকা কার্ড নিয়েই নির্ধারিত তারিখে শিশুকে নিয়ে টিকা কেন্দ্রে যেতে হবে।
প্রথমে ঘোষণা হয়েছিল, ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাম্পেইন শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা গেল, সেই সময়ে দুর্গাপূজার ছুটি থাকায় অনেক স্কুল ও মাদ্রাসা খোলা থাকবে না। আবার মাঠপর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও শেষ হয়নি। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় সময় পিছিয়ে দেওয়া হবে। নতুন সূচি অনুযায়ী, ক্যাম্পেইন শুরু হবে ১২ অক্টোবর থেকে। প্রথম দশ দিন দেশের সব স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের এক সাথে টিকা দেওয়া হবে। যারা স্কুলে যায় না বা কোনো কারণে টিকা নিতে পারবে না, তাদের জন্য বাড়তি সুযোগ রাখা হয়েছে। পরের আট দিন সারাদেশের সব EPI কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। ফলে কেউ বাদ পড়বে না এই টাইফয়েড টিকা থেকে।
টাইফয়েড একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। দূষিত পানি, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও নোংরা পরিবেশ থেকে এটি দ্রুত ছড়ায়। শিশুদের মধ্যে এর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। প্রতিবছর বাংলাদেশে লাখ লাখ শিশু টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। কারও উচ্চ জ্বর ওঠে, কারও শরীর একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে, আবার অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হয়। তাই এই ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে বিশেষজ্ঞরা যুগান্তকারী উদ্যোগ বলছেন। তারা মনে করেন, ঠিকমতো বাস্তবায়ন হলে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুলাংশে কমে যাবে।

এই ভ্যাকসিনের নাম TCV বা টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন। এটি একটি ডোজেই দেওয়া হয়। অর্থাৎ বাচ্চাকে বারবার আসতে হবে না, একবার ইনজেকশন নিলেই কাজ শেষ। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ভ্যাকসিন অন্তত তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়। এর ফলে শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং টাইফয়েডের প্রকোপ স্পষ্টভাবে কমে আসে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে যে পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেখানে এই টিকা কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে অভিভাবকেরা সহজে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। সাইটে প্রবেশ করলে প্রথমে শিশুর জন্ম নিবন্ধন নম্বর চাইবে। যদি কারও জন্ম সনদ না থাকে, সে ক্ষেত্রে অভিভাবকের মোবাইল নম্বর দিয়েও নাম অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। নিবন্ধন শেষ হলে একটি টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে হবে। এই কার্ড ছাড়া টিকা দেওয়া হবে না। তাই অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ কার্ড অবশ্যই প্রিন্ট করে সঙ্গে নিতে হবে অথবা মোবাইলে সংরক্ষণ রাখতে হবে আপনাদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ নিয়ে কোনো ধরনের আতঙ্কের প্রয়োজন নেই। ভ্যাকসিনটি নিরাপদ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স Gavi এই উদ্যোগে সহযোগিতা করছে। নেপাল, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার আরও কিছু দেশে ইতিমধ্যেই এই টিকা দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ফল আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে যেহেতু এত বড় কর্মসূচি দেশে প্রথমবার হতে যাচ্ছে, তাই নানা প্রশ্ন উঠছে। অনেকে ভাবছেন, শিশুর শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে কি না। চিকিৎসকেরা এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন, ছোটখাটো জ্বর বা হাত ফুলে যাওয়ার মতো সাধারণ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা অন্য যেকোনো টিকার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। কিন্তু ভয় পাওয়ার মতো গুরুতর কিছু নেই। বরং এই ভ্যাকসিন না দিলে ভবিষ্যতে শিশু আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়বে।
অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন স্কুলে মাইকিং, ব্যানার ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচারণা চলছে। বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউবে vaxepi.gov.bd registration নিয়ে ছোট ছোট ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে অভিভাবকেরা সহজেই বুঝতে পারেন কীভাবে নিবন্ধন করবেন। গ্রামের মানুষ যাতে বাদ না পড়ে, সেই কারণে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকেও যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে কেউ চাইলে সরাসরি নিবন্ধন করাতে পারবেন।

এই ভ্যাকসিন কর্মসূচিকে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন। কারণ একসঙ্গে পাঁচ কোটি শিশুকে কভার করা সহজ কাজ নয়। এর জন্য লাখ লাখ ভ্যাকসিন ডোজ সংরক্ষণ, পরিবহন, বিতরণ এবং প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরাও থাকবেন মাঠে। তাদেরকে আগেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যাতে ভিড় বা বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, তার জন্য টিকা কেন্দ্রে সময় ভাগ করে দেওয়া হবে।
টাইফয়েডের বিরুদ্ধে এত বড় পদক্ষেপ নেওয়া বাংলাদেশে এই প্রথম। আগে কিছু এলাকায় সীমিত আকারে টিকা দেওয়া হলেও, এবার সারা দেশকে একই ছাতার নিচে আনা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফও এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। কোনো ধরনের ফি বা খরচ লাগবে না। তাই অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান, যেন সবাই নিবন্ধন করে সময়মতো সন্তানদের নিয়ে আসে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, শুধু ভ্যাকসিন দিলেই সব সমস্যা শেষ হয়ে যাবে না। সঙ্গে পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, সুপেয় পানি ব্যবহার, খাবার ঢেকে রাখা এসব অভ্যাসও অনেক জরুরি। নাহলে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাবে। তবে ভ্যাকসিন নেওয়া হলে রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমে যাবে এবং শিশুদের রোগভোগ অনেকটা হ্রাস পাবে।
সবশেষে বলা যায়, vaxepi.gov.bd registration এখন শুধু একটি ওয়েবসাইট নয়, এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার প্রতীক। বাবা-মায়ের জন্য এটি একধরনের আশ্বাস, যেখানে কয়েক মিনিট সময় ব্যয় করে একটি নাম লেখানো মানেই সন্তানের জন্য বড় সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইন শুধু একটি স্বাস্থ্য উদ্যোগ নয়, এটি পুরো জাতির জন্য এক নতুন দিগন্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরেই এই টাইফয়েড ভ্যাকসিন জাতীয় কর্মসূচিতে যুক্ত করার দাবি জানাচ্ছিলেন। ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে এ ভ্যাকসিন আগে থেকেই প্রচলিত এবং ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। অবশেষে বাংলাদেশেও এ উদ্যোগ শুরু হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা এটিকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে টাইফয়েড সংক্রমণের হার অন্তত ৮০ শতাংশ কমে আসবে।
সরকারি পর্যায়ে জানানো হয়েছে, প্রথম ধাপে শুধু ঢাকা দক্ষিণেই ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তী এক বছরের মধ্যে এটি সারাদেশে বিস্তৃত করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টাইফয়েড টিকা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে শিশুদের জন্য আগেই ১২ ধরনের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এবার টাইফয়েড ভ্যাকসিন যুক্ত হওয়ায় জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতা আরও প্রসারিত হলো।
এ ছাড়া ভ্যাকসিন প্রদানের পাশাপাশি টাইফয়েড প্রতিরোধে জনসচেতনতার উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি পান করা, খাবার ঢেকে রাখা, হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং রাস্তার খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ টিকা নেওয়া সত্ত্বেও মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ঝুঁকি থেকে যায়।
এই ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও সহযোগিতা করছে। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (GAVI) ভ্যাকসিনের একটি বড় অংশ সরবরাহ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফ মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে। এর ফলে শুধু ভ্যাকসিন প্রয়োগ নয়, বরং জনগণের মধ্যে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজও সহজ হচ্ছে।
সরকার মনে করছে, এই কার্যক্রম ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্য খরচও কমাবে। কারণ টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি, বিশেষ করে যখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। অথচ একটি টিকা বিনামূল্যে দেওয়ার মাধ্যমে সেই খরচ আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। অর্থনীতিবিদরাও একে দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য লাভজনক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
অভিভাবকদের কাছে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই টিকা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। এজন্য কোনো ধরনের নিবন্ধন ফি, হাসপাতাল ফি বা অতিরিক্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই। শুধু শিশুকে নির্ধারিত কেন্দ্রে নিয়ে গেলেই টিকা দেওয়া হবে। যারা স্কুলে যায়, তারা স্কুলের মাধ্যমেই টিকা পাবে। আবার যারা স্কুলে ভর্তি নয়, তারাও নিকটস্থ টিকাকেন্দ্রে গিয়ে একইভাবে ভ্যাকসিন নিতে পারবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, টাইফয়েড ভ্যাকসিন কর্মসূচি বাংলাদেশের টিকাদান ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে আগামী প্রজন্ম টাইফয়েডের মতো বিপজ্জনক রোগ থেকে সুরক্ষা পাবে এবং স্বাস্থ্যখাতের ওপর চাপও কমবে। সরকারের লক্ষ্য হলো, ২০২৬ সালের মধ্যে সারাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের মধ্যে থাকা সব শিশু-কিশোরকে টাইফয়েড ভ্যাকসিনের আওতায় আনা। এভাবে বাংলাদেশ একটি সুস্থ ও রোগমুক্ত প্রজন্মের দিকে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।